শীতে জুতা ও মোজায় গন্ধ প্রতিরোধে কার্যকর উপায়

Sabbir Space💲

5 Dec, 2024

শীতকালে দীর্ঘ সময় জুতা ও মোজা পরে থাকার কারণে পায়ে ঘাম জমে, যা থেকে অস্বস্তিকর গন্ধের সৃষ্টি হতে পারে। এটি শুধু নিজেকেই নয়, আশপাশের মানুষকেও বিরক্তির মধ্যে ফেলে।

শীতে জুতা ও মোজায় গন্ধ প্রতিরোধে কার্যকর উপায়

তবে কিছু সহজ উপায় মেনে চললে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সঠিক পায়ের যত্ন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং উপযুক্ত মোজা ও জুতা ব্যবহার করলে শীতে পা থেকে দুর্গন্ধ দূর করা সম্ভব। আজকের এই আর্টিকেলে শীতে জুতা ও মোজায় গন্ধ প্রতিরোধের কার্যকর উপায়গুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।

পা পরিষ্কার রাখা

শীতে পায়ের গন্ধ প্রতিরোধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো পা পরিষ্কার রাখা। পায়ে ঘাম জমে গেলে ব্যাকটেরিয়া এবং ফাংগাসের বৃদ্ধি ঘটে, যা পায়ে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। তাই পায়ের সঠিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। প্রতিদিন পা ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার রাখলে এ সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়। নিচে পা পরিষ্কার রাখার জন্য কিছু কার্যকর পদ্ধতি তুলে ধরা হলো:

প্রতিদিন পা ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুনঃ শীতকালে পা ধোয়ার প্রতি অনেকেই উদাসীন হয়ে পড়েন। তবে প্রতিদিন পা পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরি। হালকা গরম পানিতে পা ভিজিয়ে রাখুন ১০-১৫ মিনিট।পা ধোয়ার জন্য অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহার করুন। আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে ভালোভাবে ঘষে ময়লা পরিষ্কার করুন। গোসলের সময় পা ধোয়ার জন্য আলাদা করে সময় দিন।
লবণ পানিতে পা ভিজিয়ে রাখাঃ লবণ পানিতে পা ভিজিয়ে রাখলে ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু দূর হয় এবং পায়ের ত্বক নরম থাকে। এক বালতি হালকা গরম পানিতে ২-৩ টেবিল চামচ লবণ মিশিয়ে নিন। পা এতে ১০-১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। পা শুকিয়ে গেলে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহারঃ ব্যাকটেরিয়া দূর করতে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল সাবান অত্যন্ত কার্যকর। এটি পায়ের দুর্গন্ধ কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন পা ধোয়ার সময় অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহার করুন। এটি বিশেষত আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে ভালোভাবে লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
পা শুকনো রাখাঃ পা ধোয়ার পর শুকনো না রাখলে আর্দ্রতা পায়ের গন্ধের কারণ হতে পারে। তাই পা ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। পা ধোয়ার পর শুকনো তোয়ালে দিয়ে ভালোভাবে মুছে নিন। পা শুকানোর পর ট্যালকম পাউডার বা কর্নস্টার্চ ব্যবহার করলে আর্দ্রতা কমবে এবং পায়ের গন্ধ প্রতিরোধ করা যাবে।
নখের যত্ন নেওয়াঃ পায়ের নখের ভেতর ময়লা জমে থাকতে পারে, যা দুর্গন্ধের অন্যতম কারণ। নিয়মিত নখ কেটে পরিষ্কার রাখুন। নখের ভেতরে জমে থাকা ময়লা বের করে নিন।

শুষ্ক পা নিশ্চিত করা

পায়ে দুর্গন্ধের অন্যতম প্রধান কারণ হলো আর্দ্রতা বা ভেজাভাব। শীতকালে পা ঘামতে পারে, আর ভেজা পায়ে মোজা বা জুতা পরার ফলে ব্যাকটেরিয়া জন্মায়, যা দুর্গন্ধের কারণ হয়। তাই পা শুষ্ক রাখা অত্যন্ত জরুরি। পা শুকনো রাখলে ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের বৃদ্ধি রোধ করা যায়, ফলে পায়ের গন্ধ অনেকটাই কমে। নিচে পা শুষ্ক রাখার কয়েকটি কার্যকর উপায় তুলে ধরা হলো:

পা ধোয়ার পর ভালোভাবে শুকিয়ে নিনঃ প্রতিবার পা ধোয়ার পর তা ভালোভাবে শুকিয়ে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ভেজা পায়ে মোজা বা জুতা পরলে আর্দ্রতা আটকে যায় এবং গন্ধের সৃষ্টি হয়। পা ধোয়ার পর একটি শুকনো ও পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে আঙুলের ফাঁকসহ পুরো পা ভালোভাবে মুছে নিন। পায়ের আঙুলের ফাঁক শুকানোর জন্য হালকা গরম হাওয়া দিতে পারেন।
ট্যালকম পাউডার বা কর্নস্টার্চ ব্যবহারঃ পা শুকনো রাখতে ট্যালকম পাউডার বা কর্নস্টার্চ অত্যন্ত কার্যকর। এগুলো পায়ের আর্দ্রতা শুষে নেয় এবং দুর্গন্ধ প্রতিরোধ করে। পা ধোয়ার পর এবং পুরোপুরি শুকিয়ে যাওয়ার পর ট্যালকম পাউডার বা কর্নস্টার্চ পায়ে এবং আঙুলের ফাঁকে লাগান। এটি পায়ের ত্বককে শুষ্ক রাখবে এবং ঘাম কমাবে।
অ্যান্টি-ফাঙ্গাল পাউডার প্রয়োগঃ যদি পায়ে ঘাম বেশি হয় এবং দুর্গন্ধের সমস্যা থাকে, তাহলে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। এটি ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের বৃদ্ধি রোধ করে। বেশি সমস্যা হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টি-ফাঙ্গাল পাউডার ব্যবহার করুন।
সঠিক মোজা ব্যবহারঃ ভুল ধরনের মোজা পায়ে আর্দ্রতা বাড়াতে পারে। তাই এমন মোজা ব্যবহার করতে হবে, যা পায়ের ঘাম শুষে নেয়। কটন বা উল দিয়ে তৈরি মোজা ব্যবহার করলে পায়ের ঘাম শোষিত হয় এবং পা শুকনো থাকে। বাঁশ ফাইবারের মোজা পায়ের ঘাম শোষণ করে এবং গন্ধ কমাতে সাহায্য করে।
ভেজা মোজা এড়ানোঃ ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে মোজা কখনোই পরা উচিত নয়। এটি পায়ে গন্ধ বাড়ায়। প্রতিদিন মোজা বদলান এবং ধুয়ে শুকিয়ে নিন। দ্রুত শুকানোর জন্য ড্রায়ার ব্যবহার করতে পারেন।
পায়ের বায়ু চলাচল নিশ্চিত করাঃ পায়ে বায়ু চলাচল নিশ্চিত হলে ঘাম কমে এবং পা শুকনো থাকে। সম্ভব হলে বাড়িতে ওপেন-টু জুতা ব্যবহার করুন, যাতে পায়ে বাতাস লাগে। জুতা এমন হতে হবে, যাতে পায়ের ভেতরে বাতাস চলাচল করতে পারে।

উপযুক্ত মোজা ব্যবহার

শীতকালে জুতা ও মোজার ভেতরে পা ঘামতে পারে, যা পায়ের দুর্গন্ধের অন্যতম কারণ। সঠিক ধরনের মোজা ব্যবহার করলে পায়ের ঘাম শোষিত হয় এবং গন্ধ কমানো যায়। মোজা পায়ের স্বস্তি ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পায়ের ত্বককে শুকনো রাখতে সাহায্য করে। নিচে উপযুক্ত মোজা ব্যবহারের জন্য কিছু নির্দেশনা ও টিপস তুলে ধরা হলো:

কটন (সুতির) মোজা বেছে নিনঃ সুতির মোজা সবচেয়ে আরামদায়ক এবং শীতকালের জন্য উপযুক্ত। এটি ঘাম শোষণে কার্যকর, ফলে পায়ে আর্দ্রতা জমতে পারে না। সুতির মোজা পায়ের ঘাম দ্রুত শোষণ করে। পায়ের ত্বককে শুষ্ক রাখে। দীর্ঘ সময় পরে থাকলেও পায়ে আরামদায়ক অনুভূতি দেয়।
উলের মোজা ব্যবহারঃ শীতের তীব্রতা থেকে পা সুরক্ষিত রাখতে উলের মোজা আদর্শ। এটি শুধু উষ্ণতা দেয় না, বরং ঘাম শোষণেও সহায়তা করে। উলের মোজা তাপমাত্রা ধরে রাখে এবং পা গরম রাখে। ঘাম শোষণ করে এবং পায়ে আর্দ্রতা জমতে দেয় না।
মেরিনো উল বা বাঁশ ফাইবারের মোজাঃ মেরিনো উল এবং বাঁশ ফাইবার দিয়ে তৈরি মোজা প্রাকৃতিকভাবে ঘাম শোষণ করে এবং ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে। এগুলো অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন, যা পায়ের দুর্গন্ধ কমায়। মেরিনো উল হালকা এবং আরামদায়ক। বাঁশ ফাইবার পরিবেশবান্ধব এবং ত্বকের জন্য উপকারী।
সিন্থেটিক বা নাইলনের মোজা এড়িয়ে চলুনঃ সিন্থেটিক বা নাইলনের মোজা বাতাস চলাচলে বাধা দেয় এবং ঘাম শোষণ করতে ব্যর্থ হয়। এগুলো আর্দ্রতা ধরে রাখে, যা পায়ে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। পায়ের ত্বকে অস্বস্তি ও চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে।
ঘন ঘন মোজা পরিবর্তন করুনঃ একই মোজা বারবার ব্যবহার করলে পায়ের গন্ধ বাড়ে। তাই প্রতিদিন মোজা পরিবর্তন করা জরুরি। মোজা প্রতিদিন ধুয়ে পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিন। গরম পানিতে ধুলে ব্যাকটেরিয়া দূর হয়।
ডাবল লেয়ার মোজা ব্যবহারঃ যদি বেশি ঠান্ডা অনুভূত হয়, তাহলে ডাবল লেয়ার মোজা ব্যবহার করতে পারেন। এটি পা গরম রাখবে এবং ঘাম শোষণে কার্যকর হবে। ভেতরের লেয়ার সুতির এবং বাইরের লেয়ার উলের হলে সর্বোত্তম ফলাফল পাবেন।

মোজা নিয়মিত পরিষ্কার রাখা

শীতকালে পায়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এবং দুর্গন্ধ প্রতিরোধে মোজা নিয়মিত পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরি। ব্যবহৃত মোজায় ঘাম, ময়লা ও ব্যাকটেরিয়া জমে, যা পায়ের গন্ধের প্রধান কারণ। পরিষ্কার মোজা ব্যবহার করলে শুধু দুর্গন্ধ কমে না, বরং পায়ের ত্বকের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। নিচে মোজা পরিষ্কার রাখার উপায় ও টিপস বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

প্রতিদিন মোজা পরিবর্তন করুনঃ একই মোজা দীর্ঘ সময় পরলে পায়ে ঘাম ও ময়লা জমে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। তাই প্রতিদিন মোজা বদলানো জরুরি। এক জোড়া মোজা প্রতিদিন ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত মোজা হাতের কাছে রাখুন, যাতে প্রয়োজনে পরিবর্তন করতে পারেন।
গরম পানিতে মোজা ধোয়াঃ গরম পানিতে মোজা ধুলে ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু সহজেই দূর হয়। এটি মোজা জীবাণুমুক্ত রাখার অন্যতম কার্যকর উপায়। হালকা গরম পানিতে ডিটারজেন্ট মিশিয়ে নিন।মোজা এতে ১৫-২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। ভালোভাবে ঘষে ময়লা ও ব্যাকটেরিয়া দূর করুন। পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিন।
অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ডিটারজেন্ট ব্যবহারঃ মোজা পরিষ্কার করতে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ডিটারজেন্ট ব্যবহার করলে জীবাণু আরও ভালোভাবে দূর হয়। ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস দূর করে। মোজাকে দুর্গন্ধমুক্ত রাখে।
মোজা শুকানোর সঠিক পদ্ধতিঃ ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে মোজা পায়ে পরলে গন্ধ বাড়ে এবং পায়ে ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে। তাই মোজা ভালোভাবে শুকানো জরুরি। রোদে শুকালে মোজা দ্রুত শুকায় এবং জীবাণু মরে যায়। যদি রোদে শুকানো সম্ভব না হয়, তবে ড্রায়ারে শুকিয়ে নিন।
ব্লিচ বা জীবাণুনাশক ব্যবহারঃ অনেক সময় মোজায় স্থায়ী দাগ বা গন্ধ থেকে যায়। সেক্ষেত্রে ব্লিচ বা জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে পারেন। ব্লিচ মিশ্রিত পানিতে মোজা ১০-১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এরপর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
হাতে ধোয়া বনাম ওয়াশিং মেশিনে ধোয়াঃ মোজা পরিষ্কারের জন্য হাতে ধোয়া বা ওয়াশিং মেশিন উভয় পদ্ধতিই ব্যবহার করা যায়। বেশি যত্নের প্রয়োজন হলে হাতে ধোয়া ভালো। স্বল্প সময়ে বেশি মোজা পরিষ্কার করতে চাইলে ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করুন।
আলাদা মোজা সংরক্ষণঃ পরিষ্কার মোজা এবং ব্যবহৃত মোজা একসঙ্গে রাখলে দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে। তাই আলাদা আলাদা মোজা সংরক্ষণ করুন। পরিষ্কার মোজা একটি আলাদা ড্রয়ার বা ব্যাগে রাখুন।ব্যবহৃত মোজা ধোয়ার আগে আলাদা ঝুড়িতে রাখুন।

জুতা পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখা

জুতা পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখা পায়ের গন্ধ প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নোংরা বা ভেজা জুতা ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাসের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে, যা পায়ে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে জুতা শুধু গন্ধমুক্ত রাখা যায় না, বরং এর স্থায়িত্বও বৃদ্ধি পায়। নিচে জুতা পরিষ্কার এবং শুষ্ক রাখার বিস্তারিত পদ্ধতি দেওয়া হলো:

নিয়মিত জুতা পরিষ্কার করুনঃ জুতা নিয়মিত পরিষ্কার করলে ময়লা, ঘাম ও জীবাণু জমতে পারে না।জুতার বাইরের অংশ নরম ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করুন। ভেতরের অংশ ভেজা কাপড় বা ব্রাশ দিয়ে ঘষে ময়লা দূর করুন। প্রয়োজন হলে হালকা ডিটারজেন্ট মিশ্রিত পানিতে ভিজিয়ে পরিষ্কার করুন।
জুতার সোল পরিষ্কার রাখাঃ জুতার সোল বা ভেতরের প্যাডে ঘাম জমে গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে। সোল পরিষ্কার রাখা বা পরিবর্তন করা গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত সোল খুলে ধুয়ে শুকিয়ে নিন। যদি সোল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, নতুন সোল ব্যবহার করুন।
জীবাণুনাশক স্প্রে ব্যবহারঃ জুতার ভেতরের অংশ জীবাণুমুক্ত রাখতে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতিদিন জুতা ব্যবহারের পর স্প্রে করুন। এটি ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাসের বৃদ্ধি রোধ করে।
ভেজা জুতা দ্রুত শুকানোঃ ভেজা জুতা দুর্গন্ধের অন্যতম কারণ। তাই ভেজা জুতা দ্রুত শুকিয়ে ফেলা জরুরি। জুতা রোদে রেখে শুকান। ভেতরে পত্রিকা বা টিস্যু পেপার ভরে রাখলে ভেজাভাব দ্রুত শুষে নেয়। প্রয়োজন হলে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করতে পারেন।
বাতাস চলাচল নিশ্চিত করাঃ জুতার ভেতরে বাতাস চলাচল নিশ্চিত হলে আর্দ্রতা কমে এবং ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর সম্ভাবনা হ্রাস পায়। জুতার ভেতর কিছুক্ষণ খোলা রেখে দিন। ব্যস্ত দিন শেষে জুতা খোলা জায়গায় রাখুন, যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে।
জুতা ঘন ঘন পরিবর্তন করুনঃ একই জুতা প্রতিদিন ব্যবহার না করে কয়েক জোড়া জুতা ঘুরিয়ে ব্যবহার করুন। এতে প্রতিটি জুতা পরার পর শুকানোর সুযোগ পায়। দুর্গন্ধের সম্ভাবনা কমে।
বেকিং সোডা ব্যবহার করুনঃ জুতার ভেতরের গন্ধ দূর করতে বেকিং সোডা অত্যন্ত কার্যকর। রাতে জুতার ভেতরে কিছু বেকিং সোডা ছিটিয়ে রাখুন। সকালে ঝেড়ে ফেলে জুতা ব্যবহার করুন।
বিশেষ ধরনের ইনসোল ব্যবহারঃ অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বা দুর্গন্ধনাশক ইনসোল জুতার ভেতরে ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো ঘাম শোষণ করে এবং গন্ধ কমায়। পায়ে আরাম দেয়।

ঘরোয়া প্রতিকার

দামী প্রসাধনী বা কেমিক্যাল স্প্রের প্রয়োজন ছাড়াই পায়ের গন্ধ কমানোর জন্য অনেক ঘরোয়া উপায় রয়েছে। ঘরে সহজলভ্য উপকরণ ব্যবহার করে পা, মোজা এবং জুতার দুর্গন্ধ দূর করা যায়। নিচে কিছু প্রাকৃতিক ও কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:

বেকিং সোডার ব্যবহারঃ বেকিং সোডা একটি শক্তিশালী গন্ধনাশক, যা পায়ের ঘাম এবং ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। প্রতিদিন জুতা এবং মোজার ভেতরে এক চিমটি বেকিং সোডা ছিটিয়ে রাখুন। ৬-৮ ঘণ্টা পর ঝেড়ে ফেলুন। এটি পায়ের ত্বকেও ব্যবহার করতে পারেন: এক চামচ বেকিং সোডা পানিতে মিশিয়ে পা ভিজিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট।
লেবুর রস ও গোলাপজলঃ লেবুর রস অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং প্রাকৃতিক ডিওডোরাইজার হিসেবে কাজ করে। এক টেবিল চামচ লেবুর রস এবং দুই টেবিল চামচ গোলাপজল মিশিয়ে পায়ে লাগান। ১০-১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি পায়ের ত্বককে সতেজ রাখবে এবং দুর্গন্ধ দূর করবে।
চা পাতার ভিজিয়ে রাখা পানিঃ চায়ে থাকা ট্যানিন পায়ের ঘাম নিয়ন্ত্রণ করে এবং ব্যাকটেরিয়া দূর করে।২-৩টি চা ব্যাগ গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে ঠান্ডা করুন। এতে পা ২০-৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন।নিয়মিত ব্যবহারে পায়ের গন্ধ কমবে।
লবণ পানি দিয়ে পা ধোয়াঃ লবণ পানি ব্যাকটেরিয়া দূর করতে কার্যকর এবং এটি পায়ের ত্বককে শুষ্ক রাখে। এক বালতি গরম পানিতে ১ কাপ লবণ মিশিয়ে নিন। এতে পা ১৫-২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এটি সপ্তাহে ২-৩ বার করলে ভালো ফল পাবেন।
ভিনেগার বা আপেল সিডার ভিনেগারঃ ভিনেগার প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে এবং পায়ের গন্ধ কমাতে সাহায্য করে। এক কাপ ভিনেগার বা আপেল সিডার ভিনেগার পানিতে মিশিয়ে নিন। এতে পা ভিজিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। এরপর পা ধুয়ে শুকিয়ে নিন।
কর্পূরের ব্যবহারঃ কর্পূর অ্যান্টিসেপ্টিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন, যা পায়ের গন্ধ দূর করতে সহায়ক। এক বালতি পানিতে এক টুকরো কর্পূর ভিজিয়ে পা ধুয়ে ফেলুন। এটি পায়ের ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাস কমায়।
নারকেল তেল ও টি ট্রি অয়েলঃ নারকেল তেল এবং টি ট্রি অয়েল অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে। সমান পরিমাণ নারকেল তেল ও কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে পায়ে মালিশ করুন। এটি পায়ের ত্বক মসৃণ রাখে এবং গন্ধ কমায়।
এলাচ ও দারুচিনিঃ এলাচ এবং দারুচিনি প্রাকৃতিক ডিওডোরেন্ট হিসেবে কাজ করে। দারুচিনি এবং এলাচ পাউডার জুতার ভেতরে ছিটিয়ে রাখুন। এটি জুতার দুর্গন্ধ কমাতে সাহায্য করবে।
পুদিনা পাতার পেস্টঃ পুদিনা পাতা ত্বক ঠান্ডা রাখে এবং পায়ের গন্ধ দূর করতে কার্যকর। পুদিনা পাতা পেস্ট করে পায়ে লাগিয়ে রাখুন ১০ মিনিট। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
চারকোল পাউচ ব্যবহারঃ অ্যাক্টিভেটেড চারকোল গন্ধ শোষণে অত্যন্ত কার্যকর। জুতার ভেতরে চারকোল পাউচ রেখে দিন। এটি রাতারাতি গন্ধ শোষণ করে নেবে।

সঠিক জুতা নির্বাচন

শীতে পায়ের আরাম এবং দুর্গন্ধমুক্ত রাখার জন্য সঠিক জুতা নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুল জুতা পায়ে ঘাম জমিয়ে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির সুযোগ দেয়, যা থেকে পায়ে দুর্গন্ধ হয়। সঠিক আকার, উপকরণ এবং জুতার ধরন পায়ের স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়। নিচে সঠিক জুতা নির্বাচন করার বিস্তারিত দিকনির্দেশনা তুলে ধরা হলো:

জুতার সঠিক আকার নির্বাচনঃ সঠিক আকারের জুতা পায়ের আরাম ও স্বস্তির জন্য অপরিহার্য। জুতা পরার সময় পায়ের আঙ্গুলের সামনে পর্যাপ্ত জায়গা রাখুন। অত্যন্ত টাইট বা ঢিলা জুতা এড়িয়ে চলুন।সন্ধ্যার দিকে জুতা কিনুন, কারণ তখন পা সামান্য ফোলা থাকে, যা সঠিক মাপ নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সক্ষম জুতা নির্বাচনঃ বাতাস চলাচল করে এমন জুতা পায়ের ঘাম কমাতে সাহায্য করে। লেদার (চামড়া), ক্যানভাস বা ব্রিদেবল মেশ কাপড়ের জুতা নির্বাচন করুন। সিন্থেটিক উপাদানের জুতা এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি ঘাম জমাতে পারে।
আরামদায়ক ইনসোল (Insole) ব্যবহারঃ ইনসোল পায়ের আরাম নিশ্চিত করে এবং ঘাম শোষণ করে।অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বা অর্দোথোটিক ইনসোল ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত ইনসোল পরিষ্কার করুন বা প্রয়োজন হলে পরিবর্তন করুন।
ওয়াটারপ্রুফ জুতা বেছে নিনঃ শীতকালে ভেজা জুতা দুর্গন্ধের অন্যতম কারণ। তাই ওয়াটারপ্রুফ জুতা ব্যবহার পা শুষ্ক রাখতে সহায়ক। ভেজা পরিবেশ থেকে পা রক্ষা করে। জুতার ভেতরে আর্দ্রতা জমতে দেয় না।
হালকা ওজনের জুতা নির্বাচনঃ হালকা ওজনের জুতা দীর্ঘ সময় পরলেও পায়ে স্বস্তি দেয় এবং কম ঘামায়। ফোম বা ইভা সোলযুক্ত জুতা বেছে নিন। স্পোর্টস বা ট্রেকিং শু পায়ে আরাম দেয়।
বন্ধ জুতা বনাম খোলা জুতাঃ শীতকালে সাধারণত বন্ধ জুতা বেশি ব্যবহার করা হয়, তবে পায়ে বাতাস চলাচলের জন্য মাঝে মাঝে খোলা জুতা ব্যবহার করাও জরুরি। বাড়িতে বা কাজের ফাঁকে খোলা স্যান্ডেল বা স্লিপার ব্যবহার করুন। এতে পা বিশ্রাম পায় এবং ঘাম শুকিয়ে যায়।
হিলের উচ্চতা বিবেচনা করুনঃ অত্যধিক উঁচু হিল বা একেবারে সমান জুতা পায়ে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। মাঝারি হিল বা আর্চ সাপোর্টযুক্ত জুতা বেছে নিন। এটি পায়ের স্বাভাবিক ভঙ্গি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
হাইজেনিক জুতা ব্যবহারের জন্য স্যামপ্লিংঃ নতুন জুতা কেনার আগে তা পায়ে ভালোভাবে ফিট হচ্ছে কিনা পরীক্ষা করুন। মোজা পরে জুতা ট্রায়াল নিন। হাঁটার সময় পায়ের আরাম পরীক্ষা করুন।
জুতার সোলের গ্রিপ গুরুত্বপূর্ণঃ শীতে পিচ্ছিল বা বরফ-covered জায়গায় চলাচলের জন্য ভালো গ্রিপযুক্ত জুতা প্রয়োজন। পা পিছলে যাওয়ার ঝুঁকি কমায়। সুরক্ষিত চলাচল নিশ্চিত করে।
পায়ের জন্য প্রয়োজনীয় সাপোর্ট নিশ্চিত করুনঃ জুতা পায়ের আর্চ ও গোড়ালির জন্য সাপোর্ট প্রদান করতে হবে। আর্চ সাপোর্টযুক্ত জুতা কিনুন। পায়ের গঠনের উপর ভিত্তি করে বিশেষ জুতা ব্যবহার করতে পারেন।

শেষকথাঃ উপসংহার

শীতকালে জুতা ও মোজার গন্ধ প্রতিরোধে সঠিক পরিচর্যা ও সাবধানতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক আকারের জুতা নির্বাচন, আরামদায়ক মোজা ব্যবহার, নিয়মিত পরিষ্কার এবং ঘরোয়া প্রতিকার গন্ধ কমাতে সহায়ক। এছাড়া, পায়ের জন্য সঠিক সাপোর্ট এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার উপযুক্ত উপকরণও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শীতের মরসুমে এসব পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করলে পা থাকবে স্বাস্থ্যকর এবং গন্ধমুক্ত। তাই, পায়ের যত্ন নিন এবং শীতে আরামদায়ক ও সতেজ অনুভূতি উপভোগ করুন।

স্বাস্থ্য ও সেবা