বিশ্বব্যাপী বিটকয়েনের আইনগত অবস্থা। সারসংক্ষেপ এবং ভবিষ্যৎ প্রবণতা

বিটকয়েনের দাম ওঠানামার কারণ? কেন বিটকয়েন এর মূল্য এত পরিবর্তনশীল?বিভিন্ন দেশে বিটকয়েনের আইনগত অবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সমসাময়িক বিষয়, যা ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারের বৈধতা এবং প্রতি দেশের সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে ভিন্ন হতে পারে। বিটকয়েনের মতো ডিজিটাল মুদ্রা বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তবে এর ব্যবহার, ট্রেডিং, এবং মাইনিং বিষয়ে বিভিন্ন দেশে আলাদা আইন ও বিধিনিষেধ রয়েছে।

কিছু দেশে বিটকয়েনকে বৈধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যেখানে কিছু দেশে এটি নিষিদ্ধ বা সীমিত। এই নিবন্ধে আমরা বিভিন্ন দেশের বিটকয়েনের আইনগত অবস্থা নিয়ে আলোচনা করব এবং কীভাবে এটি বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি এবং ব্যবসায়িক পরিবেশকে প্রভাবিত করছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানাব।

যুক্তরাষ্ট্র (USA)

যুক্তরাষ্ট্রে বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি বৈধ হিসেবে স্বীকৃত, তবে এর ব্যবহারের উপর কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম এবং বিধিনিষেধ আছে। ২০১৩ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের ফিনান্সিয়াল ক্রাইম এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্ক (FinCEN) বিটকয়েন এবং অন্যান্য ডিজিটাল মুদ্রাকে "পাইরি" (Virtual Currency) হিসেবে চিহ্নিত করে এবং এগুলোর ট্রেডিং ও ব্যবহার করার জন্য কিছু বিশেষ বিধিমালা প্রবর্তন করে।

যুক্তরাষ্ট্রে বিটকয়েন মূলত একটি পণ্য হিসেবে বিবেচিত, এবং এটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দ্বারা পেমেন্ট গেটওয়ে, লেনদেন, বা বিনিয়োগ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে, ফেডারেল সরকার ক্রিপ্টোকারেন্সির উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে বিভিন্ন ধরনের আইন প্রণয়ন করেছে।

যেমন, Internal Revenue Service (IRS) বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির উপর ট্যাক্স আরোপ করে এবং এর উপার্জন থেকে আয়কর আদায় করে। ২০২১ সালে, মার্কিন ট্রেজারি বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের উপর আরও কঠোর মনিটরিং নীতি প্রবর্তন করেছে, যা ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহারের উপর অতিরিক্ত নজরদারি তৈরি করেছে।

যদিও বিটকয়েন যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ, তবে বিভিন্ন রাজ্য তাদের নিজস্ব আইন প্রণয়ন করতে পারে, যার কারণে এক রাজ্যে এটি বৈধ হলেও অন্য রাজ্যে নিষিদ্ধ বা সীমিত থাকতে পারে। এছাড়া, বিটকয়েনের ব্যবহার বাণিজ্যিক লেনদেনে হতে পারে, তবে তা অবৈধ কার্যকলাপের জন্য ব্যবহৃত হলে, তা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

আরো পড়ুনঃ বিটকয়েন লেনদেনের সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা 

চীন (China)

চীন বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। ২০১৭ সালে, চীন সরকার বিটকয়েনের ট্রেডিং এবং মাইনিং নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর পরবর্তীতে, ২০২১ সালে চীন আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয় এবং দেশের বিভিন্ন অংশে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং কার্যক্রম বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়।

চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, People's Bank of China (PBOC), ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত লেনদেন বন্ধ করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেয়। দেশের অভ্যন্তরে ডিজিটাল মুদ্রার ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে চীনের নাগরিকদের ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

চীন সরকারের এই সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ হিসেবে নিরাপত্তা উদ্বেগ, অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণের শক্তি এবং মুদ্রাস্ফীতি প্রতিরোধের পরিকল্পনা থাকতে পারে। এর ফলে চীনে ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার একপ্রকার অপ্রচলিত হয়ে গেছে এবং দেশটি ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে।

যদিও চীন বিটকয়েনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে, তবে বিটকয়েন এবং অন্যান্য ডিজিটাল মুদ্রার বিষয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি সবসময় পরিবর্তনশীল। বিশেষ করে, চীন সরকার তাদের নিজস্ব ডিজিটাল মুদ্রা, যেমন ডিজিটাল ইউয়ান (e-CNY) চালু করেছে, যা সরকারী মুদ্রার ডিজিটাল সংস্করণ এবং এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণের আরও বেশি ক্ষমতা অর্জন করতে চায়।

ভারত (India)

ভারতে বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়, তবে এর উপর আইনগত অবস্থা কিছুটা অস্বচ্ছ। ২০১৮ সালে, ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, Reserve Bank of India (RBI), ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত আর্থিক লেনদেনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। তবে ২০২০ সালে, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সেই নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে দেয় এবং বিটকয়েনের ব্যবহার আবার বৈধ হয়ে যায়।

বর্তমানে, ভারতে বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির উপর স্পষ্ট কোনো নিয়ম না থাকলেও, এটি বিনিয়োগ এবং পেমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, ভারতীয় সরকার ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যাপারে কিছু কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রবর্তন করার কথা বিবেচনা করছে। ২০২১ সালে, ভারত সরকার একটি বিল প্রস্তাব করে যার মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হতে পারে এবং এর বদলে সরকারি ডিজিটাল মুদ্রা চালু করার প্রস্তাব দেয়।

এছাড়া, ভারতের একাধিক রাজ্যে বিটকয়েনের ব্যবহার বাড়ছে, তবে সরকার ক্রিপ্টোকারেন্সির বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা দিচ্ছে এবং জনগণকে এতে বিনিয়োগ করার আগে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছে।

বর্তমানে, ভারত সরকার বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের দিকে মনোনিবেশ করছে এবং এই বিষয়ে ভবিষ্যতে আরও বিধিমালা প্রবর্তিত হতে পারে।

জাপান (Japan)

জাপানে বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি বৈধ এবং সরকারীভাবে স্বীকৃত। ২০১৭ সালে, জাপান সরকার বিটকয়েনকে "পণ্য" হিসেবে আইনগতভাবে স্বীকৃতি দেয় এবং এটি একটি সাধারণ লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল থেকে, জাপানে ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের জন্য একটি নতুন আইন কার্যকর করা হয়, যা দেশটির ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস এজেন্সি (FSA)-কে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসার উপর নিয়ন্ত্রণ এবং নজরদারি দেওয়ার অধিকার প্রদান করে।

জাপানে, বিটকয়েন ব্যবহার করে পণ্য বা সেবা কেনা বৈধ, এবং দেশটির কিছু বড় ব্যবসা যেমন রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে এবং অনলাইন শপগুলো ক্রিপ্টোকারেন্সি গ্রহণ করে থাকে। এটি আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্যও ব্যবহৃত হয়, এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগের জন্য জাপানিদের মধ্যে একটি বড় বাজার সৃষ্টি হয়েছে।

জাপান সরকার ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেশ কিছু বিধি-নিষেধ এবং নিয়মাবলী চালু করেছে। এই বিধিমালা গুলি ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জগুলির জন্য কড়া নিবন্ধন প্রক্রিয়া এবং গ্রাহকদের অর্থ রক্ষার জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করতে বাধ্য করে। ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসায়ীদের জন্য কার্যকরী আইনি কাঠামো ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা হয়েছে, যার ফলে জাপান একটি নিরাপদ এবং নিয়ন্ত্রিত ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজার গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে।

তবে, জাপানে ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনে কিছু সীমাবদ্ধতা এবং সতর্কতাও রয়েছে। যেমন, বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগের ঝুঁকি সম্পর্কে স্পষ্ট সতর্কবার্তা এবং এটি নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে যে, কোনো ধরনের অবৈধ কার্যকলাপ (যেমন মানি লন্ডারিং বা প্রতারণা) ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারের মাধ্যমে সংঘটিত না হয়।

আরো পড়ুনঃ বিটকয়েনের ইতিহাস। বিটকয়েনের আবিস্কার থেকে বর্তমান অবস্থা 

রাশিয়া (Russia)

রাশিয়াতে বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার কিছুটা জটিল এবং সীমাবদ্ধ। ২০১৪ সালে রাশিয়া সরকার ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে ২০১৯ সালে কিছুটা নরম মনোভাব গ্রহণ করে। বর্তমানে, রাশিয়াতে বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি বৈধ কিন্তু সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রিত নয়।

রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা দিয়ে থাকে, এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে চাইছে। ২০২০ সালে, রাশিয়া সরকার একটি নতুন আইন প্রবর্তন করে, যা ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন ও ক্রয়-বিক্রয়কে বৈধতা দেয়, তবে এটি সম্পদ হিসেবে ব্যবহার বা বিনিয়োগের জন্য পূর্ণমাত্রায় অনুমোদিত নয়। অর্থাৎ, বিটকয়েন বা অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি দিয়ে সরাসরি পণ্য বা সেবা কেনা-বেচা সম্ভব নয়।

রাশিয়ার সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্ত। একদিকে, ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার এবং মাইনিং অবৈধ কার্যকলাপের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে, যেমন মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসী অর্থায়ন। অন্যদিকে, রাশিয়া ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিংয়ে অন্যতম বৃহত্তম দেশ হয়ে উঠেছে, এবং মাইনিং কার্যক্রমের জন্য অনেক রাশিয়ান নাগরিক এবং প্রতিষ্ঠান মাইনিং ফার্ম পরিচালনা করছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়া সরকার একটি সরকারি ডিজিটাল মুদ্রা, রুবলের ডিজিটাল সংস্করণ তৈরি করার চিন্তা করছে, যা একটি বিকল্প ক্রিপ্টোকারেন্সি হিসেবে ব্যবহার হতে পারে। তবে, বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারের ব্যাপারে এখনো অনিশ্চয়তা ও নিয়ন্ত্রণের অভাব রয়ে গেছে।

দক্ষিণ কোরিয়া (South Korea)

দক্ষিণ কোরিয়া বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারকে বৈধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, তবে এটির উপর কিছু নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ এবং বিধিনিষেধ রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার বিটকয়েন এবং অন্যান্য ডিজিটাল মুদ্রার লেনদেনের ওপর নজরদারি রাখতে বেশ কিছু কঠোর বিধিমালা প্রবর্তন করেছে, যাতে এর ব্যবহার এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় থাকে এবং অবৈধ কার্যকলাপ প্রতিরোধ করা যায়।

২০১৭ সালে, দক্ষিণ কোরিয়া সরকার একটি বড় পদক্ষেপ নেয় এবং দেশটির ব্যাংকগুলোর জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জগুলির সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। তবে, ২০১৮ সালে এই নিষেধাজ্ঞাগুলি কিছুটা শিথিল করা হয় এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন আবার বৈধ হয়ে ওঠে, তবে এটি কিছু নির্দিষ্ট নিয়মাবলীর আওতায় পরিচালিত হতে থাকে।

দক্ষিণ কোরিয়ার ফিনান্সিয়াল সুপারভাইজরি সার্ভিস (FSS) এবং ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (FATF) ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারের উপর নজরদারি করছে এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জের উপর কড়া আইন আরোপ করছে। এর মধ্যে আছে, ব্যবহারকারীদের আসল নামের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন করতে বাধ্য করা, যাতে অবৈধ অর্থ লেনদেন প্রতিরোধ করা যায়।

এছাড়া, দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার ২০২২ সালে ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ডিজিটাল অ্যাসেটস নিয়ে আরও কঠোর আইন প্রবর্তন করার ঘোষণা দেয়, যা পরবর্তী বছরে কার্যকর হতে পারে। এর মাধ্যমে, সরকারের উদ্দেশ্য হলো ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারের ওপর আরও নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং এতে বিনিয়োগকারী এবং ব্যবহারকারীদের জন্য সুরক্ষা প্রদান।

অথচ, দক্ষিণ কোরিয়ায় ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতি আগ্রহ ব্যাপকভাবে বেড়েছে এবং এটি একটি জনপ্রিয় বিনিয়োগ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। দেশটির কিছু বড় শহরে বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি দিয়ে পণ্য এবং সেবা কেনার ব্যবস্থা চালু রয়েছে।

আরো পড়ুনঃ বিটকয়েন কী? বিটকয়েন কীভাবে কাজ করে? 

যুক্তরাজ্য (United Kingdom)

যুক্তরাজ্যে বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি বৈধ এবং সেগুলোর ব্যবহার এবং লেনদেন সম্পূর্ণরূপে অনুমোদিত। তবে, যুক্তরাজ্য সরকার ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারের উপর নির্দিষ্ট নিয়ম এবং বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, যাতে এটি নিরাপদ এবং নিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবহৃত হয়।

২০২০ সালে, যুক্তরাজ্যের ফাইন্যান্সিয়াল কন্ডাক্ট অথরিটি (FCA) একটি নির্দেশনা জারি করে, যা ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ এবং সংস্থাগুলির জন্য একটি নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করে। এর মাধ্যমে, ক্রিপ্টোকারেন্সি পরিষেবা প্রদানকারীদের জন্য কাস্টমার পরিচিতি যাচাই এবং অর্থ পাচার প্রতিরোধে (AML) একটি শক্তিশালী কাঠামো তৈরি করা হয়।

যুক্তরাজ্য সরকার ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের উপর ট্যাক্স আরোপ করেছে, এবং এটি একটি পণ্য বা উপকরণ হিসেবে গণ্য। বিটকয়েনের মাধ্যমে উপার্জিত লাভ বা বিনিয়োগের রিটার্ন ট্যাক্সের আওতায় আসে, এবং এটি "ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স" (CGT) হিসেবে বিবেচিত হয়।

এছাড়া, যুক্তরাজ্যের সরকার ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকতে বলেছে, কারণ এটি একটি অত্যন্ত অস্থির বাজার এবং এতে বিনিয়োগের ঝুঁকি রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজারে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিধি-বিধান স্থির করা হয়েছে, এবং এ বিষয়ে নিয়মিত পর্যালোচনা ও আপডেট চালানো হয়।

যুক্তরাজ্যে বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেশ কিছু ব্যবসা এবং প্রতিষ্ঠান পেমেন্ট হিসেবে বিটকয়েন গ্রহণ করছে এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে পণ্য বা সেবা কেনার সুবিধা দিচ্ছে।

তবে, সরকার ভবিষ্যতে ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ডিজিটাল অ্যাসেটসের বাজারে আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে, বিশেষ করে অবৈধ কার্যকলাপ প্রতিরোধ এবং বাজারের স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য।

শেষকথাঃ উপসংহার 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির আইনগত অবস্থান ভিন্ন। কিছু দেশ বিটকয়েনকে বৈধ ঘোষণা করেছে, কিছু দেশ এটি সীমাবদ্ধ করেছে, আবার কিছু দেশে এটি নিষিদ্ধও। এই নিবন্ধে, আমরা বিশ্লেষণ করবো বিভিন্ন দেশের বিটকয়েনের আইনগত অবস্থা, যাতে আপনি জানতে পারেন কোন দেশে বিটকয়েন ব্যবহারের উপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এবং কোথায় এটি অবাধে ব্যবহার করা যায়।

যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, জাপান, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে বিটকয়েনের অবস্থান ভিন্ন হলেও, প্রতিটি দেশ তার নিজস্ব বিধিমালা এবং আইন প্রণয়ন করেছে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারের ওপর। এখানে, আপনি জানতে পারবেন কীভাবে এসব দেশে বিটকয়েনের ব্যবহার বা বিনিয়োগ আইনগতভাবে পরিচালিত হয় এবং এর ওপর যে কোন বিধিনিষেধ রয়েছে।

বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কিত আইন বিশ্বব্যাপী পরিবর্তিত হচ্ছে, তাই নিয়মিত আপডেট থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।