কোরবানির পশু কেনার সময় কী কী দেখে নিতে হয়?

ইসলামিক দৃষ্টিতে সফল জীবনের সংজ্ঞা: দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য পথনির্দেশপ্রতি বছর ঈদুল আজহার এই আনন্দঘন সময়টিতে মুসলিম উম্মাহর ঘরে ঘরে কোরবানির আয়োজন হয়। আর এই কোরবানি যেন আল্লাহর কাছে কবুল হয়, তার জন্য অবশ্যই শরিয়তের নিয়ম মেনে উপযুক্ত পশু বাছাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই জানেন না, কোরবানির পশু কেনার সময় ঠিক কী কী বিষয় দেখা জরুরি। বিশেষ করে ২০২৫ সালে কোরবানির হাটে গিয়ে যেন কেউ ঠকবেন না, তাই পশু কেনার আগে কিছু বিষয় ভালোভাবে দেখে নেওয়া দরকার।

শুধু বাহারি চেহারা বা বড় আকার দেখে নয়, বরং পশুর স্বাস্থ্য, বয়স, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, এবং শরিয়তের নির্ধারিত শর্তগুলো মেনে কোরবানির পশু কেনাই একমাত্র গ্রহণযোগ্য। এই লেখায় আমরা জানব, ২০২৫ সালে কোরবানির পশু কেনার সময় কোন কোন বিষয় দেখে নেওয়া উচিত, এবং কীভাবে বুঝবেন কোন পশুটি কোরবানির জন্য উপযুক্ত।

পশুর বয়স যাচাই করুন

কোরবানির পশুর বয়স শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। কেবল নির্ধারিত বয়সের পশুই কোরবানির জন্য গ্রহণযোগ্য। অনেক সময় হাটে গিয়ে দেখা যায়, বাহারি চেহারা বা বড় আকার দেখে অনেকেই পশু কিনে ফেলেন, অথচ বয়স ঠিক আছে কিনা সেটা যাচাই করেন না। এতে কোরবানি কবুল হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। তাই পশুর বয়স যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি।

কোন পশুর জন্য কত বছর বয়স হতে হবে?

ইসলামি বিধান অনুযায়ী কোরবানির পশুর বয়স হতে হবে —

• গরু ও মহিষ: ২ বছর পূর্ণ
• ছাগল ও দুম্বা: ১ বছর পূর্ণ
• ভেড়া: ১ বছর পূর্ণ, তবে ৬ মাস বয়সের ভেড়া যদি ১ বছরের মতো পরিপূর্ণ-স্বাস্থ্যবান হয়, তাহলে সেটিও কোরবানি করা যাবে।

পশুর বয়স কিভাবে বুঝবেন?

পেশাদার পশু ব্যবসায়ীরা সাধারণত দাঁত দেখে পশুর বয়স নির্ধারণ করেন। আপনি চাইলে এই পদ্ধতিতে নিজেও যাচাই করতে পারেন।

দাঁত দেখে পশুর বয়স বোঝার উপায়:

• গরু বা মহিষের সামনের দুটি দুধ দাঁত পড়ে গিয়ে নতুন দুইটি দাঁত উঠলে বুঝতে হবে পশুটি ২ বছর পূর্ণ করেছে।
• ছাগল, ভেড়া বা দুম্বার ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। ১ বছর বয়স হলে সামনের দুটি দুধ দাঁত পড়ে গিয়ে নতুন দাঁত উঠতে শুরু করবে।

কেন বয়স যাচাই করা জরুরি?

শরিয়তের নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত বয়সের কম হলে সেই পশু কোরবানি বৈধ হবে না। শুধু বাহারি বাহার বা বড় সাইজের লোভে পড়ে কম বয়সি পশু কিনে নিলে কোরবানি কবুল হবে না, বরং গুনাহের আশঙ্কা থাকবে।

অতিরিক্ত টিপস

• পশু হাটে গেলে বিক্রেতার কাছ থেকে বয়স জিজ্ঞেস করুন।
• মুখের দাঁত পরীক্ষা করে নিন।
• সন্দেহ হলে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি বা পশু চিকিৎসকের সহায়তা নিন।

পশুর স্বাস্থ্য ভালো কি না দেখুন

কোরবানির পশু কেনার সময় বয়সের পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পশুর স্বাস্থ্য। কারণ, কোরবানির পশু অবশ্যই সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত হতে হবে। অসুস্থ বা দুর্বল পশু কোরবানি করা শরিয়তসম্মত নয় এবং এতে আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যায় না। তাই পশু কেনার আগে অবশ্যই তার শারীরিক অবস্থা ভালোভাবে যাচাই করে নেওয়া জরুরি।

কীভাবে বুঝবেন পশু সুস্থ আছে কিনা?

পশুর শরীরের কিছু লক্ষণ দেখে সহজেই বোঝা যায় সে সুস্থ কি না। যেমনঃ

• চোখ উজ্জ্বল ও পরিষ্কার।
• নাক দিয়ে পানি পড়ছে না।
• মুখ দিয়ে অতিরিক্ত লালা ঝরছে না।
• শরীরের পশম চকচকে ও মসৃণ।
• পশু ঠিকমতো দাঁড়িয়ে থাকে এবং স্বাভাবিকভাবে হাঁটে।
• কোনো ক্ষত বা ফোঁড়া নেই।
• মুখ, গলা ও পেট স্বাভাবিক আছে।
• কাশি বা শ্বাসকষ্ট নেই।

অসুস্থ পশুর লক্ষণ

যদি পশুর মধ্যে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যায়, তাহলে সেটি না কেনাই ভালো —

• এক বা দুই চোখ দিয়ে পানি পড়া।
• নাক দিয়ে ঘন সাদা বা হলদেটে পানি পড়া।
• অতিরিক্ত দুর্বল বা হেঁটে যেতে অক্ষম।
• গায়ে বা মুখে বাজে দুর্গন্ধ।
• শরীরে ক্ষত, ফুসকুড়ি বা ঘা।
• অস্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস।

কেন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি?

একটি সুস্থ পশু কোরবানির সময় সহজে জবাই করা যায় এবং তার মাংসও মানসম্মত ও নিরাপদ হয়। অন্যদিকে, অসুস্থ পশুর মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং শরিয়তের দৃষ্টিতেও গ্রহণযোগ্য নয়।

অতিরিক্ত পরামর্শ

• পশু হাটে দিনের বেলায় গিয়ে ভালো আলোয় পশু পরীক্ষা করুন।
• পশুর দাঁত, চোখ, নাক ও পায়ের দিকে খেয়াল করুন।
• প্রয়োজন হলে অভিজ্ঞ কারও সাহায্য নিন।

পশুর অঙ্গহানি আছে কিনা দেখুন

কোরবানির পশুর শরীর সম্পূর্ণ সুস্থ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঠিক থাকা অত্যন্ত জরুরি। শরিয়তের বিধান অনুযায়ী, কোনো ধরনের অঙ্গহানি বা শারীরিক ত্রুটি থাকলে সেই পশু কোরবানির জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। অনেক সময় হাটে বা বিক্রেতার অসতর্কতার কারণে কিছু পশুর শরীরে ছোটখাটো সমস্যা থেকে যায়, যা খেয়াল না করলে চোখ এড়িয়ে যেতে পারে। তাই পশু কেনার সময় অবশ্যই তার শরীর ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

কী কী অঙ্গ ঠিকঠাক আছে কিনা দেখবেন?

পশুর দেহের যেসব অঙ্গ কোরবানির শর্ত অনুযায়ী ঠিক থাকা আবশ্যকঃ

• দুইটি চোখ ভালো ও স্বাভাবিক আছে কি না।
• কান অক্ষত ও সম্পূর্ণ আছে কি না।
• লেজ সম্পূর্ণ আছে কি না।
• চারটি পা সোজা ও শক্ত আছে কি না।
• কোনো পা ভাঙা বা খোঁড়া নয় কি না।
• শরীরে কোনো বড় ক্ষত, কাটা দাগ বা ঘা নেই কি না।

কোন কোন অঙ্গহানি হলে কোরবানি হবে না?

নিম্নের শারীরিক ত্রুটির পশু কোরবানি বৈধ নয়ঃ

• এক বা দুই চোখ অন্ধ হলে।
• এক বা দুই কান কাটা বা ভাঙা থাকলে।
• লেজ কাটা বা ভাঙা হলে।
• পা ভাঙা, খোঁড়া বা হাঁটতে অক্ষম হলে।
• শরীরে এমন ক্ষত বা ঘা থাকলে, যা মাংসের মান নষ্ট করতে পারে।

কেন অঙ্গহানির পশু গ্রহণযোগ্য নয়?

কোরবানি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য, আর সেটি হতে হবে সুন্দর, সুস্থ ও নির্ভুল পশুর মাধ্যমে। অঙ্গহানি বা ত্রুটিপূর্ণ পশু কোরবানি করা শরিয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয় এবং এতে ইবাদতের পূর্ণতা থাকে না।

পরামর্শ

• পশু কেনার সময় চারপাশ ঘুরে পশু পরীক্ষা করুন।
• মুখ, কান, চোখ, লেজ ও পা ভালো করে দেখে নিন।
• সন্দেহ হলে বিক্রেতার কাছ থেকে নিশ্চিত হন।

পশুর আকার ও ওজন বিবেচনা করুন

কোরবানির পশু কেনার সময় শুধু বয়স, স্বাস্থ্য বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গই নয় — তার আকার ও ওজনও খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, কোরবানির মাংস ভাগ করা, নিজের পরিবারের জন্য রাখা এবং দরিদ্রদের মাঝে বিতরণের ক্ষেত্রে পশুর আকার-ওজন বড় ভূমিকা রাখে। এছাড়া, বড় ও সুস্থ-সবল পশু কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের বিশেষ ফজিলত রয়েছে।

কেন আকার ও ওজন দেখবেন?

• কোরবানির মাংসের পরিমাণ পরিবারের প্রয়োজন অনুযায়ী হবে কি না তা বুঝতে।
• বড়, স্বাস্থ্যবান পশুর মাংস সাধারণত সুস্বাদু ও ভালো মানের হয়।
• শরিয়তের দৃষ্টিতে অতিরিক্ত রোগা বা অতিরিক্ত দুর্বল পশু কোরবানি করা অনুচিত।
• বড় পশু কোরবানির ফজিলত ও সম্মান আলাদা।

কিভাবে বুঝবেন পশুর সঠিক আকার ও ওজন?

• পশুর গায়ের গড়ন ভালোভাবে লক্ষ্য করুন।
• পশুর শরীর যেন অতিরিক্ত রোগা না হয়।
• পশুর বুক চওড়া ও পিঠ সমান হলে বুঝতে হবে সে সুস্থ ও ভালো ওজনের।
• পশুর পা শক্তিশালী এবং হাঁটা চলা স্বাভাবিক কি না দেখুন।
• পশুর পেট বেশি হালকা দেখালে সে দুর্বল হতে পারে।

বিঃদ্রঃ

অনেক সময় হাটে বড় আকৃতির পশু দেখলে মনে হয় ওজনও অনেক, কিন্তু অনেকটাই বাতাসি বা পানি খাওয়ানো হয়। তাই যাচাই করে নিন, শুধু বাহ্যিক আকৃতি দেখে নয়।

অতিরিক্ত টিপস

• হাত দিয়ে পশুর পিঠ ও কোমর স্পর্শ করে দেখুন, খুব বেশি হাড় বের হয়ে থাকলে বুঝবেন ওজন কম।
• প্রয়োজন হলে বিক্রেতার কাছ থেকে ওজন সম্পর্কে জেনে নিন।
• মাংসের চাহিদা অনুযায়ী বড় বা মাঝারি আকারের পশু বেছে নিন।

কেন আকার-ওজন বিবেচনা করা জরুরি?

কোরবানির উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা এবং সমাজের দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। তাই মাংসের পরিমাণ যাতে সবার মধ্যে ভাগ করা যায়, সে বিষয়টি মাথায় রেখে পশুর আকার-ওজন বুঝে নির্বাচন করা বুদ্ধিমানের কাজ।

কোরবানির পশুর দাম যাচাই করুন

কোরবানির পশু কেনার সময় শুধু তার স্বাস্থ্য, বয়স, আকার ও ওজনই গুরুত্বপূর্ণ নয়, দামও একটি বড় বিষয়। অনেক সময় পছন্দের পশু কিনতে গিয়ে বাজারের দামের সাথে সঠিক মূল্য সম্পর্কে ধারণা না থাকলে অতিরিক্ত দাম দিতে হতে পারে। তাই কোরবানির পশু কেনার আগে দাম যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি।

কেন দাম যাচাই করা উচিত?

• অতিরিক্ত দাম থেকে बचতে: বাজারে বিভিন্ন বিক্রেতার মধ্যে দাম ভিন্ন হতে পারে, তবে জানলে আপনি সঠিক দামে পশু কিনতে পারবেন।
• কোরবানির জন্য সঠিক বাজেট তৈরি: যদি আপনি বাজেট অনুসারে পশু নির্বাচন করেন, তবে অনাকাঙ্ক্ষিত খরচ এড়িয়ে চলা সম্ভব।
• বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই: কখনও কখনও বিক্রেতারা দাম বেশি রাখে, তবে পশু যদি স্বাস্থ্যবান না হয়, তবে এটি আপনার ক্ষতির কারণ হতে পারে।

কিভাবে দাম যাচাই করবেন?

• মাঝারি দামের পশু বেছে নিন: সাধারণত খুব সস্তা বা খুব দামী পশু এড়িয়ে চলুন, কারণ সস্তা পশুর মান কম হতে পারে, আর বেশি দামী পশুর সাথে কোনো অতিরিক্ত সুবিধা থাকাও নাও পারে।
• বাজারে গড় দাম সম্পর্কে ধারণা নিন: পশু কেনার আগে স্থানীয় পশু বাজারের গড় দাম সম্পর্কে জেনে নিন। আপনি কিছু দোকান বা বিক্রেতার কাছে গিয়ে দাম তুলনা করতে পারেন।
• বিক্রেতার সাথে দরদাম করুন: বাজারে গেলে বিক্রেতার সাথে দরদাম করে সঠিক দাম নির্ধারণ করুন। অনেক সময় বিক্রেতারা দাম কমাতে প্রস্তুত থাকেন।
• সেই বছর বা সময়ের দাম জানুন: প্রতি বছর কোরবানির সময় পশুর দাম কিছুটা বেড়ে যেতে পারে। সে জন্য আগেই বাজারে দাম যাচাই করে নিন।

কেন দাম যাচাই করা জরুরি?

কোরবানি একটি ধর্মীয় ইবাদত, এবং এতে অতিরিক্ত টাকা খরচ করা উচিত নয়। দরকারের অতিরিক্ত দাম দিলে আপনার জন্য অপ্রয়োজনীয় আর্থিক চাপ তৈরি হতে পারে। দাম যাচাই করলে আপনি সঠিক পশু কিনতে পারবেন, যা আপনার কোরবানির উদ্দেশ্য সফলভাবে পূর্ণ করবে।

অতিরিক্ত পরামর্শ

• বিক্রেতার বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করতে ভালো রিভিউ বা পূর্ববর্তী ক্রেতাদের মন্তব্য দেখুন।
• হাটে আগে গিয়ে দাম দেখুন: দুপুরের পরে হাটে বেশিরভাগ বিক্রেতাই দাম কমিয়ে দেন, তাই একটু সময় নিয়ে গিয়ে দামে দরদাম করুন।
• একাধিক বিক্রেতা থেকে দামের তুলনা করুন।

হালাল ও বৈধ মালিকানার বিষয় নিশ্চিত হোন

কোরবানির পশু কেনার সময় এর মালিকানা এবং হালাল হওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে, কোরবানির পশুর মালিকানার বৈধতা নিশ্চিত না হলে, সেই পশুর মাধ্যমে কোরবানি করা শুদ্ধ নয়। তাই পশু কেনার আগে মালিকানা এবং তার হালাল হওয়া বিষয়টি যাচাই করা খুবই জরুরি।

কীভাবে হালাল মালিকানা নিশ্চিত করবেন?

• বিক্রেতার নথিপত্র পরীক্ষা করুন: পশুর মালিকানা বৈধ কিনা নিশ্চিত করতে বিক্রেতার কাছে পশু কেনার রশিদ বা অন্যান্য সনদ চাওয়ার মাধ্যমে এর বৈধ মালিকানা যাচাই করুন।
• সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে যাচাই করুন: পশু যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিক্রি হয়ে থাকে, তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তার মালিকানা ও হালাল হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করুন।
• প্রমাণ দেখুন: কিছু ক্ষেত্রে পশুর মাংসের উৎস, লালন-পালন বা পেছনে কোনো আইনি জটিলতা থাকতে পারে, যা হালাল মালিকানা নিশ্চিত করতে প্রমাণস্বরূপ প্রয়োজন হতে পারে।

কেন হালাল ও বৈধ মালিকানা জরুরি?

হালাল ও বৈধ মালিকানার মাধ্যমে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে, আপনার কোরবানির পশু ইসলামিক শর্তে পূর্ণ হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপযোগী। কোনো প্রকার অবৈধ বা অনৈতিক মালিকানায় পশু থাকলে তা শরিয়তের বিরুদ্ধে হতে পারে, যার ফলে আপনার কোরবানি গ্রহণযোগ্য হবে না।

হালাল ও বৈধ মালিকানা নিশ্চিত করার পদ্ধতি

• বিক্রেতার কাছে যাচাই: বিক্রেতা যখন পশু বিক্রি করে, তখন সে তার মালিকানার বৈধতা বা কোনো ধরনের আইনি জটিলতা নেই, এমন প্রমাণ দিতে পারে।
• স্থানীয় মসজিদ বা ধর্মীয় নেতাদের পরামর্শ নিন: বিশেষ ক্ষেত্রে, পশুর মালিকানা নিয়ে সন্দেহ থাকলে স্থানীয় ধর্মীয় নেতাদের পরামর্শ নিতে পারেন।
• পশুর উৎস জানুন: আপনার কেনা পশুর উৎপত্তি কোথা থেকে, কীভাবে পালন করা হয়েছে, তা জানতে চাওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।

কেন এটা গুরুত্বপূর্ন?

কোরবানির পশুর বৈধ মালিকানা নিশ্চিত করা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কোনোভাবে অবৈধ মালিকানা বা জালিয়াতি হলে, কোরবানি শুদ্ধ হবে না, যা আপনার ইবাদতকে পূর্ণতা দিতে ব্যর্থ হবে।

পশু কেনার সময় কোরবানি নিয়তের কথা স্মরণ করুন

কোরবানির মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা এবং তার রাহে দান করা। কোরবানি করার আগে, পশু কেনার সময় নিয়ত বা সংকল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। কোরবানির সময়, আপনি যে পশু কিনছেন, তা শুধুমাত্র মাংসের জন্য নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যও কিনছেন—এটি অবশ্যই মনে রাখতে হবে।

কোরবানি নিয়ত কেন গুরুত্বপূর্ণ?

• আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ: কোরবানি একটি ঈমানী কাজ, এবং নিয়ত শুধুমাত্র মাংসের জন্য নয়, বরং আল্লাহর জন্য তা করা উচিত।
• শরিয়তের শর্ত মেনে চলা: কোরবানি শুধু শারীরিক কর্ম নয়, এটি একটি ইবাদত। তাই নিয়ত নিশ্চিত করে যে আপনি আল্লাহর জন্য এ কাজ করছেন।
• ঈমান ও বিশ্বাসের প্রকাশ: কোরবানি করার সময় নিয়ত করে তা আল্লাহর পথে দান করার জন্য, আপনার ঈমান ও বিশ্বাসের প্রকাশ ঘটে।

কোরবানি নিয়ত কিভাবে করবেন?

• নিয়ত অন্তরে করুন: কোরবানি করার সময় পশু কেনার আগে অন্তরে নিয়ত করুন যে, আপনি এটি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং তার নির্দেশ পালন করার উদ্দেশ্যে করছেন।
• বিশ্বস্ততা ও খালেসতা রাখুন: কোরবানির নিয়ত যেন অন্য কোনো উদ্দেশ্যে না হয়, যেমন পেশাদারিত্ব বা বিশ্বে খ্যাতি অর্জনের জন্য। এটি শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য হতে হবে।
• যত্ন সহকারে নিয়ত করুন: যখন আপনি পশু কেনার সিদ্ধান্ত নেন, তখন আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিয়ত করুন এবং তা মনে মনে দৃঢ়ভাবে স্মরণ রাখুন।

কেন নিয়ত স্মরণ করা জরুরি?

কোরবানি একটি গম্ভীর ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আপনি যখন নিয়ত করেন, তখন সেই নিয়ত দ্বারা আপনার কাজটি আল্লাহর রাহে সম্পাদিত হয়, যা পরকালেও আপনার জন্য মঙ্গল বয়ে আনে। সুতরাং, পশু কেনার সময় এবং কোরবানি দেওয়ার সময় নিয়ত করার মাধ্যমে আপনার অন্তরে এক গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে আল্লাহর সঙ্গে।

অতিরিক্ত পরামর্শ

• শুদ্ধ নিয়ত: কোরবানি নিয়তটি শুদ্ধ ও নিঃস্বার্থ হওয়া উচিত, যা আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উদ্দেশ্য ধারণ না করে।
• স্মরণ করুন: পশু কেনার সময়, আল্লাহর স্মরণে থাকুন এবং তার উদ্দেশ্যে এই কাজ করবেন—এটি মনে রেখে সেই কাজ শুরু করুন।
• মুখে নিয়ত পড়ুন: অনেকেই জানেন, “ইন্নি ওয়াজতু ওয়াজেহি লিল্লাহি রব্বিল আলেমিন” — এই নিয়তটি মুখে পড়ার মাধ্যমে আপনি কোরবানির উদ্দেশ্যটি আবারও দৃঢ় করতে পারেন।

অতিরিক্ত কিছু দরকারি টিপস

কোরবানির পশু কেনার সময় কিছু অতিরিক্ত দরকারি টিপস মেনে চললে আপনি আরও ভালোভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন এবং কোরবানি নিশ্চিতভাবে শুদ্ধভাবে করতে পারবেন। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়া হলো যা আপনার কোরবানি প্রস্তুতিকে আরও সহজ করবে।

1. বিক্রেতার খ্যাতি যাচাই করুন: কোরবানির পশু কেনার আগে বিক্রেতার খ্যাতি যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় কিছু বিক্রেতা পশুর অস্বাস্থ্যকর অবস্থা বা কম বয়সী পশু বিক্রি করতে পারেন। সেক্ষেত্রে, আপনার পরিচিতদের বা স্থানীয়দের থেকে বিক্রেতার খ্যাতি জানুন এবং তার পরেই পশু কিনুন।
2. পশুর বয়সের সঠিক তথ্য নিন: পশুর বয়স নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১ বছর বয়সের নিচে গরু বা উট কোরবানির জন্য বৈধ নয়। তাই, পশু কেনার আগে তার বয়স সঠিকভাবে যাচাই করে নিন। অনেক বিক্রেতা ভুল বয়স জানাতে পারেন, তাই এই বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
3. কোরবানির সময় ও পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন: পশু কেনার সময়, পশুর পরিবহন ব্যবস্থা এবং কোরবানি দেওয়ার স্থানও নিশ্চিত করুন। অনেক সময় পশু ক্রয় করার পর পরিবহন ব্যবস্থার অনুপযুক্ততার কারণে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। সুতরাং, এটি আগে থেকেই নিশ্চিত করে নিন।
4. পদ্ধতিগতভাবে কোরবানি নিশ্চিত করুন: কোরবানি দেওয়ার সময় শুদ্ধ পদ্ধতি মেনে চলা জরুরি। পশু জবাই করার আগে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিন এবং শাস্ত্রীয় নিয়ম মেনে কোরবানি করুন।
5. বেশি দামে পশু কিনলে বুঝে কিনুন: বাজারে পশুর দাম পরিবর্তিত হতে পারে। কখনও কখনও বিক্রেতারা বেশি দাম নির্ধারণ করে রাখেন, তাই দাম তুলনা করে দেখুন এবং প্রয়োজনে দরদাম করুন।
6. ক্রয়ের সময় পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন: পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। কোনো পশুর শরীরে চর্মরোগ, ক্ষত বা অন্য কোনো অস্বাভাবিকতা থাকলে তা কোরবানি দেওয়ার জন্য উপযুক্ত নয়। পশুর শ্বাসপ্রশ্বাস, হাঁটার ধরন এবং খাবার গ্রহণের ক্ষমতা যাচাই করুন।
7. পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করুন: পশু কেনার আগে পরিবারের সকল সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করুন। কোরবানির জন্য উপযুক্ত পশু নির্বাচন করা সবার সম্মতিতে করা উচিত। সুতরাং, আগে থেকেই এ বিষয়ে আলোচনা করুন এবং পশু কেনার সিদ্ধান্ত নিন।

শেষকথাঃ উপসংহার

কোরবানির পশু কেনার সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নজর রাখতে হয়, যা শুধুমাত্র পশুর গুণগত মান নিশ্চিত করে না, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেও সহায়তা করে। পশুর বয়স, স্বাস্থ্য, মালিকানা এবং দাম যাচাই করা, কোরবানির উদ্দেশ্য নিশ্চিত করা, এবং হালাল নিয়ম মেনে কেনা—এই সব বিষয়গুলো বিশেষভাবে বিবেচনা করতে হবে। এর পাশাপাশি, বিক্রেতার খ্যাতি, পশুর পরিবহন ব্যবস্থা এবং পদ্ধতিগত কোরবানি করার প্রস্তুতি নিতে হবে।

প্রতিটি বিষয় যদি সতর্কতার সাথে যাচাই করা হয়, তবে কোরবানির পশু কেনার সিদ্ধান্তটি সফল হবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের দিকে এক পদক্ষেপ এগিয়ে যাবে। আপনার কোরবানি যেন পরিপূর্ণ হয়, সে জন্য এসব টিপস মনে রাখুন এবং দায়িত্বশীলভাবে কোরবানি কার্য সম্পাদন করুন।

আল্লাহ আমাদের কোরবানির কার্য সম্পাদনে সফলতা ও শান্তি দান করুন।