গরুর মাংসের রেজালা রেসিপি: ঘরোয়া স্টাইলে সহজ উপায়ে

Sabbir Space💲

14 May, 2025

গরুর মাংসের রেজালা — নাম শুনলেই জিভে জল এসে যায়। বিশেষ করে ঈদ-উল-আযহা, পারিবারিক দাওয়াত কিংবা বিয়েবাড়ির আয়োজনে এই রুচিশীল পদটির কদর বরাবরই আলাদা। দুধ, দই, কাজু-বাদাম ও ঘি-এর মিশেলে তৈরি এই মশলাবিহীন সাদা রেজালা খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি স্বাস্থ্যকরও। অনেকেই ভাবেন, গরুর মাংসের রেজালা রেসিপি খুব কঠিন — অথচ একটু যত্ন আর সঠিক পদ্ধতি জানলে খুব সহজেই বাসায় রেস্টুরেন্টের স্বাদে রেজালা রান্না করা যায়। আজকের এই আর্টিকেলে থাকছে গরুর মাংসের রেজালা তৈরির উপকরণ, ধাপে ধাপে রেসিপি, বিশেষ টিপস ও এর স্বাস্থ্য উপকারিতা।

গরুর মাংসের রেজালা রেসিপি: ঘরোয়া স্টাইলে সহজ উপায়ে

যদি আপনি গরুর মাংসের রেজালা রেসিপি, রেজালা রান্নার উপায়, অথবা ঈদের স্পেশাল রেজালা খুঁজে থাকেন — তবে এই লেখা আপনার জন্য।

উপকরণ (৪-৫ জনের জন্য)

যারা বাসায় সহজ উপায়ে গরুর মাংসের রেজালা রান্না করতে চান, তাদের জন্য এখানে প্রয়োজনীয় উপকরণের তালিকা দেওয়া হলো:

গরুর মাংস – ১ কেজি (বড় টুকরো করে কাটা)
পেঁয়াজ – ২ কাপ (পোড়া করে বাটা)
আদা বাটা – ১ টেবিল চামচ
রসুন বাটা – ১ টেবিল চামচ
দুধ – ১ কাপ
দই – ১/২ কাপ (ফেটানো)
কাজু বাটা – ৩ টেবিল চামচ
ঘি – ৩-৪ টেবিল চামচ
এলাচ – ৪-৫টি
দারচিনি – ২ টুকরা
লবঙ্গ – ৪-৫টি
তেজপাতা – ২টি
গোলমরিচ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
চিনি – ১ চা চামচ
কেওড়া জল – ১ টেবিল চামচ
লবণ – স্বাদমতো
পানি – প্রয়োজন অনুযায়ী

বিশেষ টিপস: চাইলে কাজুর বদলে বাদামও ব্যবহার করতে পারেন। আর সুগন্ধের জন্য শেষ পর্যায়ে এক চা চামচ গোলাপ জলও যোগ করা যেতে পারে।

গরুর মাংসের রেজালা রেসিপি

ঘরোয়া স্টাইলে সুস্বাদু গরুর মাংসের রেজালা তৈরি করতে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:

প্রস্তুত প্রণালি

ধাপ ১: মাংস পরিষ্কার করা: গরুর মাংস ভালোভাবে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।
ধাপ ২: মসলা ভাজা: প্যানে ঘি গরম করে তেজপাতা, এলাচ, দারচিনি ও লবঙ্গ দিন। সুগন্ধ বের হলে এতে আদা বাটা, রসুন বাটা দিয়ে ভাজুন।
ধাপ ৩: মাংস দেওয়া: মশলা ভাজার পর গরুর মাংস দিয়ে হালকা নাড়ুন। তারপর এতে ফেটানো দই, পোড়া পেঁয়াজ বাটা এবং কাজু বাটা দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে নিন।
ধাপ ৪: দুধ ও পানি যোগ: মাংস থেকে তেল ছেড়ে এলে এতে দুধ ও পরিমাণমতো গরম পানি দিন। স্বাদমতো লবণ, গোলমরিচ গুঁড়া ও চিনি দিয়ে নেড়ে দিন।
ধাপ ৫: রান্না করা: প্যান ঢেকে মাঝারি আঁচে মাংস নরম হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন। প্রয়োজনে পানি যোগ করুন।
ধাপ ৬: সুগন্ধি যোগ: মাংস সেদ্ধ হয়ে ঘন ঝোল তৈরি হলে এতে কেওড়া জল দিয়ে ২-৩ মিনিট রান্না করে নামিয়ে নিন।
ধাপ ৭: পরিবেশন: গরম গরম রেজালা পরিবেশন করুন নান রুটি, পরোটা বা পোলাওয়ের সাথে।

বিশেষ টিপস:

সুগন্ধি বাড়ানোর জন্য শেষে এক ফোঁটা গোলাপ জল দেওয়া যায়।
কাজু বাদামের পরিবর্তে কাঠবাদাম বাটাও ব্যবহার করা যেতে পারে।
মাংস অবশ্যই বড় টুকরো করে নিতে হবে।

গরুর মাংসের রেজালার উপকারিতা

গরুর মাংসের রেজালা শুধু সুস্বাদুই নয়, এতে রয়েছে নানা রকম স্বাস্থ্য উপকারিতাও। আসুন জেনে নিই এই মজাদার খাবারটির উপকারিতা:

উচ্চ প্রোটিনের উৎস: গরুর মাংস প্রোটিনসমৃদ্ধ। এই রেজালায় ব্যবহৃত মাংস দেহের পেশি গঠন, হাড় মজবুত করা এবং শরীরে শক্তি বাড়াতে সহায়ক।
শক্তি বৃদ্ধি করে: গরুর মাংসে প্রচুর আয়রন ও ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স থাকে। যা রক্তশূন্যতা দূর করে শরীরে শক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে: এতে থাকা দুধ, দই, কাজুবাদাম ও ঘি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বিশেষ করে ঠান্ডা-সর্দিতে উপকারী।
ত্বক ও চুলের জন্য ভালো: মাংসের প্রোটিন এবং দুধের ক্যালসিয়াম ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। চুল পড়া কমায় এবং ত্বক উজ্জ্বল রাখে।
হজম শক্তি বাড়ায়: রেজালায় থাকা মসলা ও ঘি হজমে সহায়ক। তবে পরিমিত পরিমাণে খেলে তা পেটের সমস্যা কমায়।
স্নায়ুতন্ত্র সুস্থ রাখে: গরুর মাংসের ভিটামিন বি১২ স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা ঠিক রাখে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।

মনে রাখবেন: যদিও গরুর মাংসের রেজালা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তবে অতিরিক্ত খেলে কোলেস্টেরল বেড়ে যেতে পারে। তাই পরিমিত পরিমাণে উপভোগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

গরুর মাংসের রেজালার পরিবেশন

গরম গরম গরুর মাংসের রেজালা পরিবেশন করার মজাই আলাদা। বিশেষ করে ঈদ, দাওয়াত বা উৎসবের দিন রেজালার সঙ্গে সঠিক আইটেম পরিবেশন করলে অতিথিদের মনে থাকবে স্মরণীয় স্বাদ।

পরিবেশন করার উপায়:

রেজালার ঝোলটা ঘন ও সুগন্ধযুক্ত রাখুন।
ওপরে সামান্য ঘি ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
চাইলে কাঁচা মরিচ ও ভাজা পেঁয়াজ দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করা যায়।

রেজালার সঙ্গে মানানসই খাবার:

গরম নান রুটি
পরোটা
সাদা ভাত
বাসমতি পোলাও
জাফরানি পোলাও

বিশেষ টিপস: শেষ মুহূর্তে এক চামচ কেওড়া জল বা গোলাপ জল ছিটিয়ে পরিবেশন করলে রেজালার স্বাদ ও ঘ্রাণ আরও দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

কিছু প্রশ্ন-উত্তর

প্রশ্ন ১: গরুর মাংসের রেজালা কি?

উত্তর: গরুর মাংসের রেজালা হলো মসলা, দুধ, দই এবং ঘি দিয়ে রান্না করা সুগন্ধি ঝোলযুক্ত মাংসের একটি ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার।

প্রশ্ন ২: রেজালা রান্নায় কোন মসলা বেশি ব্যবহার করা হয়?

উত্তর: রেজালায় তেজপাতা, দারচিনি, এলাচ, লবঙ্গ এবং পোড়া পেঁয়াজ বাটার মিশ্রণ বেশি ব্যবহৃত হয়।

প্রশ্ন ৩: গরুর মাংসের রেজালার সাথে কি পরিবেশন করা যায়?

উত্তর: এই রেজালার সঙ্গে নান রুটি, পরোটা, সাদা ভাত বা পোলাও পরিবেশন করা যায়।

প্রশ্ন ৪: গরুর মাংসের রেজালা কি স্বাস্থ্যকর?

উত্তর: হ্যাঁ, পরিমিত পরিমাণে খেলে এটি প্রোটিন ও আয়রনের ভালো উৎস। তবে অতিরিক্ত খেলে কোলেস্টেরলের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

প্রশ্ন ৫: রেজালায় দুধ না দিলে হবে কি?

উত্তর: দুধ রেজালার ঝোলকে মোলায়েম ও ঘ্রাণযুক্ত করে। দুধ না দিলে রেজালার ঐতিহ্যিক স্বাদ পুরোপুরি পাওয়া যাবে না।

গরুর মাংসের রেজালা রান্নার টিপস

মাংস বাছাই করুন ভালোভাবে: রেজালার জন্য হালকা চর্বিযুক্ত এবং বড় টুকরো গরুর মাংস নিন। এতে রান্নার সময় ঝোল সুন্দর ও মোলায়েম হবে।
পোড়া পেঁয়াজ বাটা ব্যবহার করুন: রেজালার আসল ঘ্রাণ আর স্বাদ পোড়া পেঁয়াজের উপর অনেকটাই নির্ভর করে। তাই পেঁয়াজ হালকা বাদামি করে ভেজে নিন।
ঘি এবং তেলের মিশ্রণ: শুধু তেল না দিয়ে একটু ঘি মিশিয়ে রান্না করলে রেজালার স্বাদ আর ঘ্রাণ অনেক গুণ বেড়ে যায়।
দুধ বা দই ভালোভাবে ফেটিয়ে দিন: দুধ বা দই রান্নার আগে ভালোভাবে ফেটিয়ে নিলে ঝোল সহজে কাটা যাবে না এবং ঝোল থাকবে মোলায়েম।
কেওড়া জল বা গোলাপ জল দিন শেষে: রান্না শেষে এক চামচ কেওড়া জল বা গোলাপ জল দিলে রেজালার সুগন্ধ অনেক বেড়ে যায়।
হালকা আঁচে রান্না করুন: মাংস ধীরে ধীরে সেদ্ধ করুন। এতে ঝোল মাখা মাখা হবে এবং মাংস হবে তুলতুলে নরম।
অতিরিক্ত মসলা দেবেন না: রেজালার স্বাদ থাকে হালকা মসলার ভেতরেই। বেশি ঝাল বা মসলা দিলে আসল স্বাদ নষ্ট হতে পারে।

শেষকথাঃ উপসংহার

গরুর মাংসের রেজালা এক অনন্য বাঙালি ঐতিহ্যবাহী রান্না, যার স্বাদ একবার মুখে পড়লে ভুলে যাওয়া যায় না। ঈদ, দাওয়াত কিংবা পারিবারিক আয়োজনে এই বিশেষ রেসিপিটি যেন অনিবার্য। দুধ, দই, ঘি আর সুগন্ধি মসলার মিশেলে তৈরি হওয়া রেজালার ঝোল ও মাংস যেমন স্বাস্থ্যকর, তেমনি স্বাদে অতুলনীয়।

এই লেখায় আমরা দেখলাম গরুর মাংসের রেজালার সহজ রেসিপি, প্রয়োজনীয় উপকরণ, রান্নার টিপস, উপকারিতা এবং পরিবেশন প্রণালি। আশা করি, এই রেসিপি অনুসরণ করে আপনিও আপনার প্রিয়জনদের জন্য সুস্বাদু গরুর মাংসের রেজালা রান্না করতে পারবেন।

আপনারা রেজালা রান্না করে নিজেরা উপভোগ করুন এবং অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে ভুলবেন না। আর এ ধরনের আরও মজাদার ও ঐতিহ্যবাহী রান্নার রেসিপি জানতে চোখ রাখুন আমাদের সাইটে।

সুখস্বাদু হোক আপনার পরবর্তী আয়োজন!