ইসলামিক দৃষ্টিতে কোরবানির গুরুত্ব ও নিয়ম সম্পর্কে জানুন

কোরবানির পশু কেনার সময় কী কী দেখে নিতে হয়?কোরবানি ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করা হয়। মুসলিম উম্মাহ প্রতি বছর ঈদুল আযহায় কোরবানি করে হজরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর ত্যাগের অনুকরণ করে থাকেন। এই ইবাদতের মাধ্যমে যেমন আল্লাহর নৈকট্য অর্জিত হয়, তেমনি গরিব-দুঃখীর মুখে হাসি ফোটানো সম্ভব।

অনেকেই জানেন না ইসলামিক দৃষ্টিতে কোরবানির গুরুত্ব ও নিয়ম ঠিক কীভাবে। কারা কোরবানি করবেন? কোন পশু কোরবানি হবে? কীভাবে মাংস বণ্টন করতে হবে? এ সব বিষয়েই রয়েছে স্পষ্ট নির্দেশনা।

এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত জানব কোরবানির ইতিহাস, ফজিলত, শর্ত, সময় এবং সঠিক নিয়ম সম্পর্কে। তাই আপনি যদি কোরবানির গুরুত্ব ও নিয়ম জানতে চান — তাহলে এই লেখা আপনার জন্য। চলুন জেনে নিই ইসলামিক দৃষ্টিতে কোরবানির গুরুত্ব ও নিয়ম সম্পর্কে।

কোরবানির ইতিহাস ও পটভূমি

কোরবানির ইতিহাস ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই শুরু। এর পটভূমি মূলত হজরত ইব্রাহিম (আঃ) এবং তাঁর পুত্র ইসমাইল (আঃ)-এর একটি ঐতিহাসিক ঘটনার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।

1. হজরত ইব্রাহিম (আঃ) ও তাঁর ত্যাগ: ইব্রাহিম (আঃ) আল্লাহর প্রতি তীব্র ভালোবাসা ও আনুগত্যের নিদর্শন ছিলেন। একদিন আল্লাহ তাকে স্বপ্নে নির্দেশ দেন, তাঁর প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আঃ)-কে কোরবানি করার জন্য। আল্লাহর আদেশ গ্রহণ করে ইব্রাহিম (আঃ) তাঁর পুত্রের কাছে গিয়ে তাঁকে আল্লাহর নির্দেশ সম্পর্কে জানান। ইসমাইল (আঃ) অবিলম্বে তাঁর পিতার আদেশ গ্রহণ করেন এবং ত্যাগের জন্য প্রস্তুত হন। এই মহান ত্যাগের দৃশ্য পরবর্তী সময়ে কোরবানির ইতিহাসের শুরুর দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে। আল্লাহ তাঁর নবী ইব্রাহিম (আঃ)-এর ত্যাগ কবুল করেন এবং ইসমাইল (আঃ)-এর বদলে একটি জান্নাতি দুম্বা পাঠান।
2. কোরবানি: আল্লাহর সন্তুষ্টির একটি মাধ্যম: এই ঘটনাটি মুসলিম উম্মাহর জন্য এক নিদর্শন হয়ে দাঁড়ায়, যে ত্যাগ এবং আত্মসমর্পণই আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথ। কোরবানি শুধুমাত্র পশু হত্যা নয়, এটি আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, ত্যাগ এবং সবার প্রতি সহানুভূতির প্রকাশ। এর মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চান এবং তা আল্লাহর আদেশে নিজেদের প্রিয় বস্তু ত্যাগ করার মাধ্যমে প্রমাণ করেন।
3. ঈদুল আযহা: কোরবানির একটি উৎসব: হজরত ইব্রাহিম (আঃ) ও ইসমাইল (আঃ)-এর ঐতিহাসিক ত্যাগের স্মৃতির জন্য প্রতি বছর ঈদুল আযহা উদযাপিত হয়, যেখানে মুসলিমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করেন। এটি কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানই নয়, বরং সমাজে সামাজিক বন্ধন তৈরি এবং দরিদ্রদের সাহায্য করার এক সুযোগও।
4. কোরবানির শিক্ষা: কোরবানির মাধ্যমে মুসলিমরা শুধুমাত্র আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের শিক্ষা নেন না, বরং এই ত্যাগের মাধ্যমে সমাজে সহানুভূতি, দানশীলতা এবং মানবতার গুরুত্বও প্রচারিত হয়। কোরবানি মুসলিমদের মনে আত্মত্যাগ, দায়িত্ববোধ এবং পরিপূর্ণতা চেতনা সৃষ্টি করে।

কোরবানির এই ইতিহাস ও পটভূমি মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর আদেশ মেনে চলার, ত্যাগের মূল্য বোঝার এবং গরিবদের সাহায্য করার গুরুত্ব শেখায়।

ইসলামিক দৃষ্টিতে কোরবানির গুরুত্ব

কোরবানি ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। মুসলিম উম্মাহর জন্য এটি শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, ভালোবাসা এবং তাকওয়ার প্রকাশ।

১. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের ইবাদত

কোরবানি মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা হয়। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন:

• “আল্লাহর কাছে তাদের মাংস ও রক্ত পৌঁছায় না, বরং তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে।” (সূরা হজ: ৩৭)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, কোরবানির আসল উদ্দেশ্য পশু জবাই নয়, বরং আল্লাহর আদেশ পালনে মানুষের আন্তরিকতা এবং আল্লাহভীতি।

২. হজরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর ত্যাগের অনুসরণ

কোরবানি হজরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর অনুকরণে পালন করা হয়, যিনি আল্লাহর আদেশে নিজের প্রাণপ্রিয় পুত্রকে ত্যাগ করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন। মুসলিমরা তাঁর এই ত্যাগের স্মরণে কোরবানি করেন এবং সেই সাথে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন।

৩. গরিব-দুঃখীর সাহায্য ও মানবিকতার শিক্ষা

কোরবানির মাধ্যমে সমাজের গরিব-দুঃখী ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মুখে হাসি ফোটানো যায়। ইসলামে কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করার নির্দেশ রয়েছে—এক ভাগ নিজে খাওয়ার জন্য, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের জন্য এবং এক ভাগ গরিব-দুঃখীদের মাঝে বিতরণ করার জন্য। এতে সমাজে সম্প্রীতি, ভালোবাসা ও সহানুভূতি বৃদ্ধি পায়।

৪. আত্মত্যাগ ও তাকওয়ার চর্চা

কোরবানি মানুষের অন্তরে আত্মত্যাগের চেতনা জাগিয়ে তোলে। এই ইবাদতের মাধ্যমে মানুষ শিখে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের প্রিয় জিনিসও ত্যাগ করা যায়। এটি একজন মুসলিমকে ধৈর্যশীল, ত্যাগী এবং আল্লাহভীরু হতে সাহায্য করে।

৫. পাপ মোচনের সুযোগ

হাদিসে এসেছে,

• “কোরবানির দিনে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো কোরবানি। কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর নিকট কবুল হয়।” (তিরমিজি শরীফ)

এটি এমন এক ইবাদত, যার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভের পাশাপাশি পাপ মোচনের সুযোগ পায়।

সংক্ষেপে, কোরবানি ইসলামে শুধু পশু জবাই নয়, বরং এটি আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা, তাকওয়া, মানবিকতা ও আত্মত্যাগের এক অনন্য নিদর্শন। এটি মুসলিম উম্মাহকে ন্যায়নীতি, সহানুভূতি ও আল্লাহভীতি শেখায়।

কোরবানির নিয়ম ও শর্ত

ইসলামে কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, এবং এর জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন ও শর্ত মানা আবশ্যক। কোরবানি কবুল হওয়ার জন্য শরিয়তের নির্ধারিত নিয়মগুলো জানা ও পালন করা প্রতিটি মুসলিমের কর্তব্য। নিচে কোরবানির নিয়ম ও শর্তগুলো তুলে ধরা হলো:

কোরবানির নিয়ম

১. কোরবানি দেওয়ার সময়

• ঈদুল আযহার নামাজের পর থেকে শুরু করে তৃতীয় দিন সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত কোরবানি করতে হবে।
• ঈদের নামাজের আগে কোরবানি করলে তা গৃহপালিত পশুর গোশতের মতো হবে, ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে না।

২. কোন পশু কোরবানি করা যাবে

• গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, উট ইত্যাদি নির্দিষ্ট পশু কোরবানি করা যায়।
• পশু অবশ্যই সুস্থ ও নির্দোষ হতে হবে। কোনো রোগগ্রস্ত, পঙ্গু বা অর্ধেক কান-কাটা পশু কোরবানি করা জায়েজ নয়।

৩. কোরবানির পশুর বয়স

• গরু ও মহিষ: কমপক্ষে দুই বছর বয়স হতে হবে।
• ছাগল ও ভেড়া: কমপক্ষে এক বছর, তবে ছয় মাসের ভেড়াও কোরবানি করা যায় যদি এক বছরের ভেড়ার মতো দেখায়।
• উট: কমপক্ষে পাঁচ বছর।

৪. কোরবানির পশু জবাইয়ের নিয়ম

• পশুকে কিবলামুখী করে শুইয়ে বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করতে হবে।
• পশুর গলা, খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং দুটি ধমনি কাটতে হবে।
• জবাইয়ের সময় আল্লাহর নাম না নিলে কোরবানি হবে না।

৫. কোরবানির মাংস বণ্টন

কোরবানির মাংস তিন ভাগ করতে হয়:

1. এক ভাগ নিজের জন্য
2. এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের জন্য
3. এক ভাগ গরিব-মিসকিনদের জন্য

অবশ্যই গরিব-দুঃখীদের অংশ দেওয়া মুস্তাহাব।

কোরবানির শর্ত

1. আর্থিক সামর্থ্য: যে ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। নিসাব পরিমাণ সম্পদ মানে হলো: স্বর্ণ, রূপা বা নগদ অর্থ, বাণিজ্যিক মালামাল যার মূল্য সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা সমমূল্যের সম্পদের মালিক হলে।
2. বালেগ ও আকিল হওয়া: যে ব্যক্তি বালেগ (প্রাপ্তবয়স্ক) এবং আকিল (সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন), তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব।
3. মুকিম হওয়া: মুসাফির (ভ্রমণরত) ব্যক্তির ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। তবে ইচ্ছা করলে সে কোরবানি করতে পারে।
4. ঈদুল আযহার নামাজ আদায়: কোরবানি ঈদের নামাজের পর করতে হবে।

কোরবানির নিয়ম ও শর্ত মানা প্রতিটি মুসলিমের জন্য আবশ্যক। তাতে কোরবানি যেমন কবুল হবে, তেমনি আল্লাহর সন্তুষ্টিও অর্জিত হবে।

কোরবানির ফজিলত

কোরবানি ইসলামে অত্যন্ত ফজিলতময় ও পুণ্যময় একটি ইবাদত। এটি শুধু পশু জবাই নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি, তাকওয়া এবং আত্মত্যাগের প্রতীক। মুসলিম উম্মাহর জন্য কোরবানির ফজিলত ও সওয়াবের ব্যাপারে কুরআন ও হাদিসে বহু বর্ণনা রয়েছে। নিচে কোরবানির কয়েকটি ফজিলত তুলে ধরা হলো:

১. আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ইবাদত

পবিত্র হাদিসে এসেছে:

• "কোরবানির দিনে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো পশু কোরবানি করা। কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে যায়।" (তিরমিজি শরীফ)

এটি এমন একটি ইবাদত, যা অন্য কোনো ইবাদতের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব নয়।

২. গুনাহ মোচন ও নাজাতের মাধ্যম

হাদিসে এসেছে:

• "তোমরা কোরবানি করো এবং আশাবাদী হও, কেননা কিয়ামতের দিন কোরবানির পশু তার শিং, চামড়া ও খুরসহ উপস্থিত হবে এবং তার রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়।" (ইবনে মাজাহ)

অর্থাৎ, কোরবানি শুধু দুনিয়াবি ইবাদত নয়, বরং আখিরাতের মুক্তি ও নাজাতের বড় মাধ্যম।

৩. তাকওয়ার পরিচয়

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:

• "আল্লাহর কাছে পশুর মাংস ও রক্ত পৌঁছায় না, বরং তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে।" (সূরা হজ: ৩৭)

কোরবানি আল্লাহর আদেশ পালনের মাধ্যমে বান্দার মধ্যে তাকওয়া ও আল্লাহভীতি বাড়িয়ে দেয়।

৪. হজরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর আদর্শ অনুসরণ

কোরবানি মূলত হজরত ইব্রাহিম (আঃ) ও হজরত ইসমাইল (আঃ)-এর ত্যাগের স্মরণে করা হয়। তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রাণপ্রিয় সন্তানকেও উৎসর্গ করতে দ্বিধা করেননি। এই ত্যাগের অনুকরণে কোরবানি করা বান্দার জন্য ত্যাগ ও ইমানদারির বড় প্রমাণ।

৫. গরিব-দুঃখীর মুখে হাসি ফোটানো

কোরবানির মাংস গরিব-দুঃখী ও সুবিধাবঞ্চিতদের মধ্যে বিতরণের মাধ্যমে সমাজে সম্প্রীতি, ভালোবাসা ও সহানুভূতি তৈরি হয়। এটি মুসলিম উম্মাহর মাঝে পারস্পরিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা

• মাসআলা ১: ঈদুল আযহার নামাজের আগে কোরবানি করা জায়েজ নয়। ঈদের নামাজের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোরবানি করা যাবে।
• মাসআলা ২: যে ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। নিসাব মানে হল: সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ, বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা, বা সমমূল্যের সম্পদের মালিক হওয়া।
• মাসআলা ৩: এক ব্যক্তি একাধিক পশু কোরবানি করতে পারেন। এটি মুস্তাহাব।
• মাসআলা ৪: একটি গরু বা উটে সাতজন পর্যন্ত শরিক হয়ে কোরবানি করা যাবে। তবে সবার নিয়ত আল্লাহর সন্তুষ্টি হতে হবে। কেউ গোশতের জন্য শরিক হলে সবার কোরবানি বাতিল হয়ে যাবে।
• মাসআলা ৫: কোরবানির পশুর কান, লেজ, শিং, দাঁত, চোখ ইত্যাদি অঙ্গ যদি একেবারে কাটা বা অন্ধ হয়ে যায়, তবে সে পশু কোরবানি করা যাবে না। তবে সামান্য দাগ বা অল্প সমস্যা হলে কোরবানি জায়েজ।
• মাসআলা ৬: কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করে টাকা দান করা ওয়াজিব। চামড়া বিক্রির টাকা নিজে ভোগ করা জায়েজ নয়।
• মাসআলা ৭:
• কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করা মুস্তাহাব — ১. এক ভাগ নিজের জন্য ২. এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের জন্য ৩. এক ভাগ গরিব-মিসকিনদের জন্য
• মাসআলা ৮: মুসলিম ছাড়া অমুসলিমকে কোরবানির গোশত দেওয়া জায়েজ নয়।
• মাসআলা ৯: কোরবানির পশুর কোনো অংশ — যেমন চামড়া, মাথা, পা, লেজ ইত্যাদি কসাইয়ের মজুরির বদলে দেওয়া যাবে না। এটি হারাম। বরং তাকে আলাদা মজুরি দিতে হবে।
• মাসআলা ১০: মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি করা যায়। তবে জীবিত থাকলে তার অনুমতি নেওয়া জরুরি।

কোরবানির মাসআলাগুলো জানা ও মানা ফরজ। ভুল-ভ্রান্তি এড়াতে এসব মাসআলা প্রতিটি মুসলিমের জানা জরুরি। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।

শেষকথাঃ উপসংহার

কোরবানি শুধুমাত্র পশু জবাইয়ের একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়; বরং এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বান্দার নিঃস্বার্থ ত্যাগ ও আত্মসমর্পণের অনন্য নিদর্শন। ইসলামিক দৃষ্টিতে কোরবানির গুরুত্ব যেমন অপরিসীম, তেমনি এর নিয়ম-কানুন, শর্ত ও মাসআলা জানা এবং তা সঠিকভাবে পালন করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পবিত্র কুরআন ও হাদিসে কোরবানির ফজিলত, তাৎপর্য ও বরকত নিয়ে বহু বর্ণনা রয়েছে। আর এই ইবাদতের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে তাকওয়া, দয়া, সহানুভূতি এবং সামাজিক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত হয়।

আমরা যেন প্রত্যেকেই আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী শুদ্ধ নিয়ত ও সঠিক নিয়মে কোরবানি আদায় করতে পারি — এ দোয়া করি। আর যারা এখনো কোরবানির গুরুত্ব ও নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে জানেননি, তাদের জন্য এই লেখাটি নিশ্চয়ই উপকারে আসবে।

আপনি চাইলে কোরবানির আরও গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা, দোয়া এবং ইসলামিক নিয়মাবলি জানার জন্য আমাদের অন্য আর্টিকেলগুলোও পড়ে দেখতে পারেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন, আমিন।